Villagers wanted work

সন্তান কোলে খেতমজুর মহিলা হাঁটছেন, ‘ভাষণ’ শুনতেই পদযাত্রা থামাচ্ছে গ্রাম

জেলা

কাজ চাই লক্ষ্মী পাহান, কাকলি টুডুদের। পতিরাম জুড়েই কাজের হাহাকার। 
বুধবার সকাল ১১টায় পদযাত্রা শুরু করার সময় ঠিক করা ছিল। আধ ঘণ্টা খানেক দেরি হলো। খেতমজুর প্রধান গ্রাম। মহিলারাও খেতমজুর। বাড়ির কাজ সামলে, সন্তানদের কিছুটা দেখেশুনে আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। কয়েকজন সন্তান কোলেই চলে এসেছিলেন। বাড়িতে আর কেউ নেই দেখার। পদযাত্রা সাড়ে ১১টা নাগাদ শুরু হলো। মহিলা, পুরুষ মিলে প্রায় সওয়া দুশো জন। মিনতি পাহান, শান্তি পাহানদের কথায়, ‘‘আমাদের এই এলাকায় সব ঘরে কাজ চাই। ভাতা, বাড়ির টাকা অনেকেই পায়নি। একশো দিনের কাজ বন্ধ। মাঠে আর কাজ কদিন? কাজ খুঁজতে দূরে যেতে হয়। দিনমজুরিই সম্বল। এসবের একটা বিহিত হওয়া দরকার।’’
৯টি বুথে পদযাত্রা হয়েছে এদিন পতিরামে। মাঝে তিনকোণা মোড়ে ছিল দুপুরের খাবারের বিরতি। আয়োজন ছিল সামান্য। মাটিতে বসে পদযাত্রীরা খেলেন। তারপর ফের চলল পদযাত্রা। একেকটি পাড়ায় ঢুকেছে, গ্রামবাসীরা এগিয়ে এসেছেন। শুনতে চেয়েছেন পদযাত্রার দাবি। কাজ চাই, পঞ্চায়েতে তৃণমূলের চুরি বন্ধ করতে হবে, রেগার কাজ চালু করতে হবে, বকেয়া মজুরি দিতে হবে— দাবিগুলির সমর্থনে পঞ্চায়েতের অনেক মানুষ। 


এড়োয়ালি হালিমপাড়ায় মানুষ এই কথাগুলিই মাইকে শুনতে চাইলেন। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের এই এলাকায় এদিন সকালেই লাল ঝান্ডার পদযাত্রা থামিয়ে দিলেন গ্রামবাসীরা। দাবি একটাই, মিছিলের কথা মাইকে চাই। শুধু হেঁটে, স্লোগান দিয়ে চলে গেলে হবে না। ভাষণ দিতে হবে। ভাষণ শুনতেই ভিড় জমালেন গ্রামের মানুষ। মানুষের দাবি মিটিয়ে এড়োয়ালি, কান্দুরির সব বুথ ছুঁয়ে গেল খড়গ্রামের কৃষকসভা, খেতমজুর ইউনিয়ন, সিআইটিইউ, ডিওয়াইএফআই, মহিলা সমিতি, এসএফআই’র পদযাত্রা। 
এদিন সকালে খড়গ্রামের এড়োয়ালি বাসস্ট্যান্ডে জাঠার সূচনা করেন রাজ্য যুব আন্দোলনের প্রাক্তন নেতা, সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা। পদযাত্রায় ছিলেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, এসএফআই’র জেলা সভাপতি দীপজ্যোতি সাহা প্রমুখ। সিপিআই(এম) নেতা ভরত ঘোষও পদযাত্রায় ছিলেন। উদ্বোধন করে জামির মোল্লা বলেন, সব বুথের মানুষের দাবিকে জুড়বে লাল ঝান্ডার পদযাত্রা। মানুষের দাবি নিয়ে লাগাতার লড়াইয়ে আছে বামপন্থীরাই। পঞ্চায়েতে লড়াই হবে রাস্তাতেই। সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চলছে। ফসলের দামের দাবিতে, পঞ্চায়েতে গণতন্ত্রের দাবিতে তীব্র হবে লড়াই।  তৃণমূল, বিজেপি-কে এক ইঞ্চি জমি ছাড়া যাবে না। 
এদিন চাতরপাড়া, মানিকসাগর, আইড়া হয়ে পদযাত্রা এগোয় পার্বতীপুরের দিকে। পদযাত্রায় দাবি উঠল, গ্রামের ছেলেমেয়েদের রাজ্যে কাজ চাই। গ্রামে একশো দিনের কাজ চাই, একশো দিনের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করতে হবে। গ্রাম পঞ্চায়েতে কাটমানি রাজ বন্ধ করতে হবে। পদযাত্রার সামনে ঢোল, ডগরের বাজনা। গ্রামে গ্রামে একাধিকবার থমকে  গিয়েছে পদযাত্রা। গ্রামের মানুষ এগিয়ে এসে বলেছেন, এবার পঞ্চায়েতে ভোট তারা দেবেনই। তৃণমূলের বাহিনীর হুমকিতে আর কাজ হবে না। 
রাঢ় বাংলার খড়গ্রাম সাক্ষী আছে অনাবাদী জমিকে বহুফসলি করার আন্দোলনের। সাক্ষী আছে, রাত জেগে মাঠের পাকা ধান পাহারার। এবার সেই মানুষই ভোট পাহারা দেবেন। সংগ্রামের পঞ্চায়েত পাহারা দিয়েই রক্ষা করতে হবে। পদযাত্রায়  শামিল হয়ে বললেন প্রবীণ অমর সিংহ, মসলেম কালু, রফিক শেখ, শক্তিপদ ঘোষরা। পদযাত্রায় যুবদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। 
ফুল, শঙ্খধ্বনি দিয়ে পদযাত্রীদের বরণ করে নেন কান্দুরি গ্রামের মানুষ। কান্দুরিতে বিশ্রাম নেনে পদযাত্রীরা। দুপুরের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছেন গ্রামের মানুষই। বাজার ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করা হয়েছিল আনাজ। সেই আনাজেই হয় রান্না।  


পদযাত্রা শেষে খড়গ্রাম বাসস্ট্যান্ডে সভা হয়। তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি’র জনবিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হলেন নেতৃবৃন্দ। সভায় ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেন, লুটেরাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। গ্রামের বেকার ছেলেমেয়েদের সাথে প্রতারণা করেছে তৃণমূলের সরকার। ফসলের দাম নেই, বাজারে আগুন, মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে তৃণমূল, বিজেপি। পঞ্চায়েতে প্রতারকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন মানুষ। 
এদিন মুর্শিদাবাদ জুড়ে পদযাত্রা, মিছিলে শামিল হন নতুন নতুন মানুষ। ডোমকল ব্লকের ধুলাউড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিল পার এলাকায় পাড়ায় পাড়ায় ঘোরে পদযাত্রা। ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। হরিহরপাড়ায় রুকুনপুর, মালোপাড়ায় পদযাত্রায় টোটো নিয়ে ভিড় জমান গ্রামের মানুষ। মিছিল এগতে গ্রামে গ্রামে ওঠে চোর তাড়ানোর স্লোগান। জলঙ্গীর খয়রামারি অঞ্চলের রওশনগর গ্রামে তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করে লাল ঝান্ডার লড়াইয়ে শামিল হয় সত্তরটি পরিবার। উপস্থিত ছিলেন জামির মোল্লা, জামাল হোসেন। এদিন ফারাক্কার জিগরি বলিদাপুকুর থেকে আকুড়া অবধি পদযাত্রা হয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment