মুক্তধারা নতুন গল্প
স্মৃতির চুনী পান্না
অঞ্জনা রেজ ভট্টাচার্য
এইমাত্র অতসী এই মঞ্চ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ডাকবেন না কেননা ও সাড়া দেবে না। আমিও ডাকতে পারছি না, কেননা আমি গতকাল থেকে ওই নামে ডাকার অধিকার হারিয়েছি।
অতসী খ্যাতিনামা গায়িকা। স্বনাম ধন্যা। যেমন কন্ঠ তেমন তাল লয় ছন্দ। অরূপ বছর দশেক আগে এক অনুষ্ঠানে ওর গান প্রথম শোনে। সেই দিনই গানের পর আলাপ জমায়। অরূপ বেসরকারি এক মস্ত বড় ফার্মের মস্ত বড় পোস্টে কাজ করে। সুদর্শন শিক্ষিত স্মার্ট হ্যান্ডসাম। ফলে যা হয়। লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। ক্রমে পরিচয় এর রং বদলায়। অবশেষে সাধনাতলায় সম্পর্কের স্থান হয়। অরূপের আর একটা বাড়তি গুণ। ভালো তবলা বাদক। গানের তালে মিলেমিশে ভালোই চলছিল দশ দশটা বছর। কিন্তু হঠাৎ বিধি বাম। আখ রোড দুর্ঘটনায় অরূপের ডান হাতটা জখম হয়। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল থেকে ঘোর জটিল হয়ে ওঠে। একসময় পরিত্রাণের জন্য বাদ যায় ডান হাতটা। সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গত কারীর জীবনটাও। বায়া তবলা যেমন একা বাজে না এমন এক হাতেও তবলা বাজানো যায় না।
এই পরিস্থিতিতে অনায়াসে ঢুকে পড়ে ইমন। নতুন তবলা বাদক। লোভের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোয়। অতসীর চোখ পরে। ছেলেটা তো বেশ। ভালো সংগীত বিচারী। শিক্ষিত স্মার্ট। তবে তো.....। ঝোপ বুঝে কোপ মারে। সঙ্গে সঙ্গে ইমন রাজি। দ্রুত সব ঠিকঠাক।
অরূপ দেখে আর ভাবে ঠিকই করেছে অতসী। অঙ্গুর স্বামীকে কে কতদিন......। এইতো গতকাল রাত দুটোয় বাড়ি ফেরে অতসী। সঙ্গে ইমন। খুব জলি মুড। আমতা আমতা করে অরূপ জিজ্ঞেস করে- এত রাত।
শান্ত স্বরে অতসীর জবাব- জলসায় এটা আবার রাত। সবে দুটো। সারারাত থাকতে হতে পারতো। ইমন তো বাড়ি ফিরতে পারবে না। ওর গাড়িটা......
তারপর নিচুর স্বরে বলে- থাক যেতে হবে না, আজ রাত এখানেই....। যা তো হরি গেস্ট রুমটা খুলে দে।-রাতে ওখানে আমরা খেয়ে এসেছি।
ঝলমলে সাজগোজ, কল কলে কথাবার্তা এই লাস্যময়ী অতসীকে বড্ড অচেনা লাগে। আর ক্রমশ রাগের পারদ বৃদ্ধি পায়। এমনি করেই একদিন সহ্যের পারদ সীমা ছাড়ায়। আর আচমকা অতসী বিয়ের কার্ড এগিয়ে ধরে। লিলিপ্ত ভাবে কার্ডটা তুলে নেয়। বিয়েটা তো জানা। তবু প্রশ্ন জাগে। ডিভোর্সের আগে বিয়ে! ঘোর না কাটতেই এক ঝটকায় খুলে হতবাক- একি! এ যে সত্যি সত্যি বিয়ে। অতসীকে মুখে যা আসে তাই বলে গালমন্দ করে। গতকাল অতসী ফলস্বরূপ ডিভোর্সের সই করিয়ে নেয়। এবার প্রতিশোধ নিয়ে শান্ত হয়ে চোখ রাখে। কাগজটা খুলে- পাত্র-পাত্রী আশা আর ইমন। অতসীর একমাত্র ছোট বোন।
আজ অনেক বছর পর এক মঞ্চে অতসীর সঙ্গে দেখা। এতদিন অতসী কে অনেক অনেক খুঁজেছে। কিন্তু পাইনি। একরোখা জেদি মেয়ে অতসী। আজ যখন আরেকটা গানের জন্য অনুরোধের ঝড় উঠলো। তখন অরূপের এই কথাগুলো মনে হলো।
Comments :0