Mamata Dhara expense

মমতার ধরনার খরচ জোগালো পূর্ত দপ্তর

জাতীয়

তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির রেড রোডে ধরনার খরচ জোগালো রাজ্যের পূর্ত দপ্তর!
শুরুতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ধরনায় বসবেন। পরে দলের কর্মসূচি হিসাবে ঘোষণা করেন ধরনাকে। ফলে সেই কর্মসূচির খরচ দলের করার কথা। কিন্তু তা না করে খরচের টাকা যাচ্ছে পূর্ত দপ্তর থেকেই। শাসক দলের ধরনা কর্মসূচিতে বেআইনিভাবে টাকা খরচের এই কাজে জড়িয়ে নেওয়া হয়েছে খোদ দেশের রাষ্ট্রপতিকেও!
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে গত ২৯ মার্চ রেড রোডে ধরনায় বসেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। দলের এই ধরনা কর্মসূচির জন্য পরিকাঠামো খাতে পূর্ত দপ্তর প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ধরনা মঞ্চ ও রাতে থাকার বিশেষ ঘর তৈরি করতে এই টাকা খরচ হয়েছে। এরসঙ্গে আনুষাঙ্গিক খরচ হিসাব করলে টাকার অঙ্ক ১ কোটিতে পৌঁছে যাবে। 
দলের ধরনা কর্মসূচিতে এই বিপুল টাকা খরচ করা হলেও সরকারি হিসাবে কোথাও তার উল্লেখ নেই। তাহলে কীভাবে এই টাকা খরচ করা হচ্ছে? নবান্নে রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নাগরিক সংবর্ধনার ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য সরকার। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, শাসক দলের সর্বময় নেত্রীর ধরনা কর্মসূচির যাবতীয় খরচ এখন রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের খরচের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে! নবান্নের এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনার সরকারি অনুষ্ঠানে যে টাকা খরচ করা হয়েছে। তারসঙ্গেই যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর ধরনার খরচ।’’ 
ঘটনা হলো, গত ২১ মার্চ ওডিশা যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির সামনে ধরনায় বসবেন বলে জানিয়েছিলেন। সেদিন সাংবাদিকদের কাছে তিনি জানিয়েছিলেন, দলনেত্রী হিসাবে নয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেই রেড রোডে ধরনায় বসতে চলেছেন। ‘‘২৯ তারিখ বেলা ১২ টা থেকে ধরনায় বসবো। অ্যাজ এ চিফ মিনিস্টার বসবো। ৩০ মার্চ সন্ধ্যেবেলা শেষ করব।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই পূর্ত দপ্তরের পক্ষ থেকে ধরনাকে সরকারি কর্মসূচি হিসাবেই ভেবে নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজের বরাতও দিয়ে দেওয়া হয় ঠিকাদার সংস্থাকে। 
কিন্তু রেড রোডে ধরনার কর্মসূচিতে কোথাও সরকারি কর্মসূচির নামগন্ধ ছিল না। দলীয় কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে ধরনা মঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক ঘাসফুলের সঙ্গে লেখা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি। শুরু থেকে আগাগোড়া দলীয় কর্মসূচি হিসাবে ধরনা মঞ্চকে ব্যবহার করার পর আকস্মিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রী ধরনাকে সরকারের কর্মসূচি নয় বলে ঘোষণা করেন। ‘‘এই কর্মসূচি সরকারের নয়, দলের। দেখছেন মঞ্চের পিছনে দলের প্রতীক আছে। আমি মুখ্যমন্ত্রী হয়েও আছি। অন্য মন্ত্রীরাও আছেন।’’ ধরনা শুরুর প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর মমতা ব্যানার্জি ধরনাকে সরকারের নয় বলে জানিয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা না করলেও ধরনায় যে সরকারের কোনও অস্তিত্ব ছিল না তা জানাই যাচ্ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই ধরনায় সরকারি খরচ কীভাবে দেখানো হবে তা নিয়েই বিপাকে পড়ে নবান্ন। কারণ, সরকারি কর্মসূচি হিসাবেই ধরনাকে ধরে নিয়ে যাবতীয় পরিকাঠামো গড়ার কাজ সম্পূর্ণ করেছে পূর্ত দপ্তরের ঠিকাদাররা। এমনকি, ধরনা কর্মসূচির জন্য ফ্লেক্সে লেখা সব তথ্যই জোগাড় করে দেয় তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর আর পিছিয়ে আসার কোনও সুযোগ পায়নি পূর্ত দপ্তর। এমনকি, তৃণমূল দলের তরফে খরচের টাকা নিয়ে কার্যত কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। ফলে টাকা খরচ দেখাতে শেষ পর্যন্ত বেছে নেওয়া হয় দুদিন আগে ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর জন্য সরকারি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে। ওই অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি খরচের সঙ্গে বাড়তি ধরনার খরচকে যুক্ত করে এখন বিল বানাতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। 
সরকারি টাকায় দলের কাজে খরচ এবারই প্রথম এরাজ্যে ঘটছে এমনটা নয়। এরআগে গত ২০১৯ সালে কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের ২১জুলাইয়ের সমাবেশ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেবারও বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল পূর্ত দপ্তরের বিদ্যুৎ বিভাগ। তৃণমূল কংগ্রেসের ‘শহীদ দিবস’র অনুষ্ঠানের জন্য পূর্ত দপ্তরের বিদ্যুৎ বিভাগ অস্থায়ীভাবে সমাবেশ মঞ্চে বিদ্যুৎ সংযোগের টেন্ডার পর্যন্ত ডেকে দিয়েছিল। গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের অভ্যন্তরে তুমুল আলোড়ন পড়ে যায়। এরপর প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে সেই টেন্ডার বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা কর্মসূচির সরকারি অনুষ্ঠানের সঙ্গে শাসক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির খরচকে জড়িয়ে দেওয়ার মতো নজিরবিহীন ঘটনা এবারই প্রথম ঘটেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment