Editorial

সার্বিক বিরোধী ঐক্য জরুরি

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Opposition unity is essential


পঞ্চাশ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট পাশ করানো হয়েছে মাত্র ১১মিনিটে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সংসদে ঘটেছে এমন নজিরবিহীন ঘটনা। স্বাধীন ভারতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এর কোনও নজির নেই। গণতন্ত্রের পীঠস্থানটিও এবার চলে গেছে স্বৈরাচারী শাসকের দখলে। নিজেদের মর্জি ম‍‌তো ব্যবহার করছে সংসদকে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই ছিল শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। কিন্তু সেই বাজেট নিয়ে সংসদে কোনও আলোচনা হলো না। বিরোধীদের কোনও বক্তব্য শোনা হলো না। মানুষ জানার সুযোগ পেল না বিরোধীরা কি ধরনের সং‍‌শোধন ও সংযোজনের প্রস্তাব দিচ্ছে। বিরোধীরা বারবার বলার জন্য অনুমতি চেয়েছে। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনোরকম আলোচনা নয়। বিরোধীদের কোনও কথা শোনা হবে না। সরকার তাদের নিজের মতো করে বাজেট বানিয়েছে তাই সেটাই পাশ হবে। বিরোধীদের তাতে নাক গলাতে দেওয়া হবে না। সংসদে সরকার পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। যে কো‍‌নও বিল যে কোনও সময় পাশ করাতে অসুবিধা নেই। বাজেট সেভাবেই পাশ করানো হয়েছে।

 

 


মোদী সরকার মনে করে বিরোধীদের জন্য ছিটেফোঁটা যেটুকু গণতন্ত্র সেটা ভোটের আগে। ভোটের পর বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তারা যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন গণতন্ত্রের ল্যাটা চুকে গেছে। এখন বিরোধীরা অপ্রাসঙ্গিক। সরকারের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। সরকার যখন যেমন ইচ্ছে তেমন করবে। বিরোধীরা কথা বলবে কিনা, আলোচনার সুযোগ পাবে কিনা সেটা সরকার পক্ষই ঠিক করবে।


ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্রকে মোটামুটি এমন জায়গায় নামিয়ে এনেছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার। ভারতকে যে গণতন্ত্রের জননী বলে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন সেই গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে সংসদে। সংসদের গোটা বাজেট অধিবেশনটাকে তুচ্ছ অজুহাতে অচল করে রাখে মোদীভক্ত মন্ত্রী সাংসদরা। বিশ্বের কোথাও এমন নজির মিলবে না যে শাসকদল আইনসভার অধিবেশন দিনের পর দিন অচল করে রাখে। সাধারণভাবে বিরোধীরাই সংসদে সোচ্চার হয়। শাসকের সঙ্গে সংঘাত তৈরি হয়। তার জেরে সাময়িকভাবে সংসদের কাজকর্ম ভণ্ডুল হতে পারে। কিন্তু মোদী জমানায় সবটা উলটো। এখন বিরোধীরা সংসদে আলোচনা চায়। কিন্তু সরকার পক্ষ চায় না। বিরোধিতার অধিকার কেড়ে নিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘণ্টা বাজাতে চায়। শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিরোধিতার সমস্ত অধিকার কেড়ে বিরোধীদের পুতুল বানাতে চায়।


ভারতে গণতন্ত্রের বিপদ এখন চরম বিপন্নতার মধ্যে। হিন্দুত্ববাদী অতি দক্ষিণপন্থী আরএসএস-বিজেপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে ফ্যাসিস্ত স্বৈরতন্ত্রী ব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে গণতন্ত্রের নতুন ধারণা চাপিয়ে দিতে চাইছে। গণতন্ত্রের নামে ধর্মীয় সংখ্যাগুরুবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। বদলে দিতে চাইছে ভারত রাষ্ট্রের চরিত্র।
এই দুঃসময়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য। যদি দেশের সমস্ত বিজেপি বিরোধী দল ও গোষ্ঠীগুলি গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে এক জোট হয় তাহলে বিজেপি’কে পরাজিত করা কঠিন নয়। মনে রাখতে হবে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিজেপি’র বিরুদ্ধে। গত লোকসভা নির্বাচনেও মোদীর দল ও সহযোগীরা ৩৫ শতাং‍‌শের বেশি ভোট পায়নি। অর্থাৎ ৬৫ শতাংশ মানুষ মোদীদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট রায় দি‍‌য়েছেন। দেশের মানুষের এই অবস্থানকে সম্মান ও মর্যাদা জানিয়ে সব বিরোধী দলকে এক মঞ্চে হাজির হতে হবে। দেশ রক্ষার তাগিদেই মোদী হটানোর শপথ নিতে হবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment